বর্ধমান, ২২ জানুয়ারি-
দেশের স্বাধীনতার লক্ষ্যে জাপান যাত্রার পরে রাসবিহারী বসু আর ঘরে ফেরেননি। কিন্তু মৃত্যুর ৬৯ বছর পরে তাঁর কবরের মাটি ফিরল জন্মভিটে সুবলদহ গ্রামে। মঙ্গলবার, ‘মহান বিপ্লবী রাসবিহারী বোস ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট’ আয়োজিত সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি কনসাল জেনারেল মিটসুটাকে ন্যুমাহাটা, জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন ও বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু। ১৯১৫ সালের ২১ জানুয়ারি দেশের বাইরে থেকে ভারতের স্বাধীনতা আনার স্বপ্নে বিভোর স্বাধীনতা সংগ্রামী রাসবিহারী বসু জাপানে গিয়েছিলেন। এর পর ১৯৪৫ সালের ২১ জানুয়ারি জাপানেই মারা যান তিনি। তারপর নানা স্তর থেকে রাসবিহারী বসুকে স্মরণ করার চেষ্টা করা হলেও তাঁর জন্মভিটেতে সে রকম কোনও উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। অবশেষে এ দিন রাসবিহারী রিসার্চ ইনস্টিটিউট (ভারত) ও চন্দননগর হেরিটেজের সহযোগিতায় রাসবিহারী বসুকে স্মরণ করল তাঁর গ্রাম। এই উপলক্ষে ভিড় ভেঙে পড়েছিল সুবলদহের গ্রামে। অনুষ্ঠানে জাপানের ডেপুটি কনসাল জেনারেল বলেন, “ রাসবিহারী বসু দেশের স্বাধীনতা আনার জন্য জাপানে লুকিয়ে থেকেছেন। ভারতের পরাধীনতার লাঞ্ছনাকে তিনি ভোলেননি। সিঙ্গাপুরে আটকে পড়ে ভারতীয় সেনাদের নিয়ে তিনি আজাদহিন্দ ফৌজ তৈরি করে তার সর্বময় কর্তা করেছিলেন সুভাষচন্দ্র বসুকে। ১৯৪৫ সালের ২১ জানুয়ারি, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ায় আগের মুহূর্ত পর্যন্ত তাঁর স্বপ্ন ছিল ভারতের মুক্তি। তাঁর জন্মভিটেতে দাঁড়াতে পেরে একজন জাপানি হিসেবে আমি নিজেকে গর্বিত মনে করছি।” রাসবিহারী বসুর কবরের মাটি জাপানের তামা শহরে তাঁর সমাধি মন্দির থেকে প্রায় ব্যক্তিগত উদ্যোগেই নিয়ে এসেছেন চন্দননগর পুরসভার হেরিটেজ কমিটির সদস্যা লিপিকা ঘোষ। এ দিন প্রথমে সেই মাটি রাখা হয় রাসবিহারীর জন্মভিটের সামনে। গ্রামবাসীরা সেখানে মালা দেন। এর পরে চন্দননগরের রাসবিহারী রিসার্চ ইন্সটিটিউটের কর্তা কল্যাণ চক্রবর্তী সেটিকে সভামঞ্চের সামনে নিয়ে আসেন। কল্যাণবাবু বলেন, “চন্দননগরে আমরা বেশ কিছু দিন ধরেই রাসবিহারী বসুকে নিয়ে চর্চা করছি। আমরা চাই তাতে যোগ দিক সুবলদহ।” তবে রাসবিহারী বসুর জন্ম সত্যিই সুবলদহে কি না সেই নিয়ে অবশ্য বিতর্ক রয়েছে। এ বিষয়ে কল্যাণবাবু জানান, ভদ্রেশ্বরের কাছে বিঘাটি গ্রামকে এক সময় রাসবিহারী বসুর জন্মভিটে বলে ধরা হতো। অনেক নথিতে আজও সেই তথ্য রয়ে গিয়েছে। কিন্তু রাসবিহারী বসু জাপানে বসে লেখা আত্মজীবনীতে জানিয়েছেন, বর্ধমানের সুবলদহতেই ১৮৮৬’র ২৫ মে জন্ম নিয়েছিলেন তিনি। সুবলদহ গ্রামের পথঘাট, পরিকাঠামোর বেহাল দশা দেখে জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “এই এলাকার রাস্তাঘাট মনে হচ্ছে ১০০ বছর আগেই থমকে রয়েছে। আমরা এই এলাকায় পর্যটন কেন্দ্র তৈরি করতে চাই।” অনুষ্ঠানে উপস্থিত জাপানের ডেপুটি কনসাল জেনারেলের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমরা সুবলদহে জাপান-ভারত সংস্কৃতি কেন্দ্র খোলবার জন্য আবেদন জানাচ্ছি।” এ দিনের সভায় আলোচকরা জানান, বাংলায় রাসবিহারী বসুকে নিয়ে চর্চা ক্রমশ বাড়ছে। রাসবিহারীবাবু সুবলদহ থেকে চন্দননগরে চলে গিয়েছিলেন। সেখানেই স্কুলে ভর্তি হন। তাঁর সহপাঠী ছিলেন বিপ্লবী কানাইলাল দত্ত। এর পরে তিনি কলেজে ভর্তি হন। যোগ দেন স্বাধীনতা আন্দোলনে। কল্যাণবাবু বলেন, “দীর্ঘদিন পরে রাসবিহারী বসুর পুরো আত্মজীবনী ও ব্রিটিশ গোয়েন্দা দফতরের রিপোর্ট আমাদের হাতে এসেছে। তাঁর জীবনকাহিনী যে কোনও উপন্যাসকেও হার মানায়।” ‘মহান বিপ্লবী রাসবিহারী বোস ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের সভাপতি শেখ আহম্মদ আলি বলেছেন, “ সারা বছর নানা কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা দেশের স্বাধীনতার পূজারিকে সম্মান জানাব।” কিন্তু এত দিন রাসবিহারী বসুর জন্মভিটে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি কেন? এই প্রশ্নের জবাবে জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, “বামফ্রন্টের আমলে বাংলায় স্বাধীনতা সংগ্রামী ও মনীষীদের স্মরণ করা হতো না। নতুন সরকার এসে সেই কাজ করছেন।” http://bengalbarta.com
No comments:
Post a Comment